অস্ট্রেলিয়ার দর্শনীয় স্থান

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপরাষ্ট্র দ্বীপমহাদেশ অস্ট্রেলিয়া  অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের মূল ভূখণ্ডটি তাসমানিয়া দ্বীপ অন্যান্য অসংখ্য ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী দেশ হচ্ছে নিউজিল্যান্ড, নিউগিনি ইন্দোনেশিয়া এখানে এমন কিছু বিস্ময়কর স্থান আছে যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে এই দেশ থেকে আলাদা করেছেএখানে ঘুরতে যাবার ইচ্ছে থাকলে দেখে নিতে পারেন দর্শনীয় স্থানগুলোকে
সিডনি
অস্ট্রেলিয়ার সবচাইতে জনপ্রিয় শহর হল সিডনি। শহরটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। এটি দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজধানী এবং একটি আধুনিক শহর। এই অঞ্চলের প্রথম অধিবাসীরা হাজার হাজার বছর পূর্ব থেকেই এই উপকূলে বাস করতো। তবে ১৭৮০ সালে মূলত দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পাঠানো হত এই উপকূলে। বর্তমানে ফেরীতে করে সমুদ্র ভ্রমণের জন্য দর্শনার্থীদের ঘোরানো হয় সিডনি হারবার ব্রিজ এবং আইকনিক সিডনি অপেরা হাউজে
লর্ড হাও দ্বীপ
নির্জন, মনোমুগ্ধকর এবং আধা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপ হল লর্ড হাও দ্বীপ এটি বিশ্বের প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য অসাধারণ এক স্বর্গ স্বরূপ অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের মাঝামাঝি অবস্থিত অর্ধচন্দ্রাকার আগ্নেয়গিরির অবশিষ্টাংশের এই দ্বীপটি মূলত তাসমানিয়া সাগরে অবস্থিত এই দ্বীপের বেশির ভাগ স্থানই কার্যত অক্ষত বন, প্রচুর উদ্ভিদ প্রাণীজ সম্পদ নিয়ে গঠিত ভূপ্রাকৃতিক অসাধারণ বৈচিত্র্য এই দ্বীপের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক মহাসাগরীয় আগ্নেয়শীলার বৈচিত্র্য, দক্ষিণের প্রবাল প্রাচীর, সামুদ্রিক পাখির বাসা এবং এর ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এই দ্বীপটিকে পর্যটকদের জন্য করে তুলেছে অনন্য
ওলগাস
অস্ট্রেলিয়ার আয়ারস পর্বতের পশ্চিম দিকে ওলগাস অবস্থিত এটি ৩৬টি গঠনের পাথুরে এলাকা এবং পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ শুষ্ক স্থান এটি আয়ারস পর্বত থেকে ১২০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত একটি সমতল মরুভূমি দুঃসাহসিক কাজ করতে যারা ভালোবাসেন তারাই মূলত এই মরুভূমিতে বেশি ভ্রমণ করে থাকে
মেলবোর্ন
ভিক্টোরিয়া রাজ্যের রাজধানী এবং অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর হচ্ছে মেলবোর্ন যা অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। মেলবোর্ন শহর পৃথিবীর সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর। মেলবোর্ন অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এই শহরের শপিং সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, স্পোর্টস ভেনু সব কিছুই পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। ভ্রমণ বিলাসী মানুষের জন্য মেলবোর্ন আদর্শ স্থান
অ্যালিস স্প্রিংস
অ্যালিস স্প্রিংস অস্ট্রেলিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত এবং কাছাকাছি শহর থেকে ১৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অ্যালিস স্প্রিংসে গুহা, গিরিসঙ্কট, সীমানাহীন মরুভূমি  এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের দেখা মিলে। এখানে অনেক জনবিরল  দর্শনীয় স্থান আছে এবং পর্বত আরোহণের সুযোগ আছে যেমন- উলুরো/আয়ারস পর্বত, কাটা টিজুটা কিং ক্যানিয়ন। আশির দশকে পর্যটকের আনাগোনা বেশি হওয়ার ফলে এখানকার জনসংখ্যা ২৮০০০ উন্নিত হয়
কেয়ার্ন্স(Cairns)
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু, স্বাচ্ছন্দ্যকর আবহাওয়া এবং গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ থেকে মোটামুটি কাছে হওয়ায় Cairns  অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় অবকাশ যাপনস্থল যা অস্ট্রেলিয়ার উত্তরপূর্ব কোণে অবস্থিত। Cairns প্রাদেশিক হলেও স্টাইলিশ শহর, এর জনসংখ্যা ১৫০,০০০। পর্যটকদের জন্য চমৎকার উপকূলীয় পরিবেশ এবং বিচিত্র বন্যপ্রাণীর দেখা মিলে এখানে
ক্যানবেরা
অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী হচ্ছে ক্যানবেরা। সব দেশের এম্বেসি কিংবা হাইকমিশন এখানে অবস্থিত। ক্যানবেরায় ক্যাঙ্গারু দেখা নিয়ে জনপ্রিয় লেখক শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর কিছু উক্তি স্মরণ করা যায়। তিনি বলেছেন- “আমেরিকা গেলে মানুষ যেমন নায়াগ্রা ফলস না দেখে ফিরে না তেমনি অস্ট্রেলিয়ায় গেলে ক্যাঙ্গারু না দেখে ফিরে না তিনি আরো বলেন-“সেখানে (ক্যানবেরা) পথের দুইপাশে অসংখ্য ক্যাঙ্গারু। ক্যাঙ্গারুর চলাফেরা খুব মজার, তাদের মত লেজে ভর দিয়ে জোড়া পায়ে লাফিয়ে আর কোন প্রাণী ছুটতে পারেনা। তার চেয়েও মজার হচ্ছে, মায়ের পেটের থলেতে ক্যাঙ্গারুর বাচ্চার বসে থাকা। বাচ্চা গুলোকে দেখে মনে হয়, পৃথিবীতে বুঝি এর থেকে আরামের কোন জায়গা নেই
কাকাডু
কাকডু একটি সুন্দর পার্ক যা অস্ট্রেলিয়ার উত্তর অংশে অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন দ্বীপের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত এটি। অসাধারণ সুন্দর ভূ-প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণী চমৎকার গাছপালা নিয়ে এটি গঠিত। জলপ্রপাতের সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের এখানে আকৃষ্ট করে। পরিবেশগত বিভিন্ন গবেষণার জন্য এই স্থানটিতে বিজ্ঞানী বাস্তুবিদেরাই বেশি ভ্রমণে যান
৯। গ্রেট বেরিয়ার রিফ
অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় শহর কুইন্সল্যান্ডের কোরাল সাগরে পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ প্রবাল প্রাচীর গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অবস্থিত এটি পৃথিবীর অন্যতম বড় প্রবাল প্রাচীর যা ,৯০০টির বেশি প্রবাল প্রাচীর এবং শত শত দ্বীপ নিয়ে গঠিত লক্ষ লক্ষ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ জীবন্ত প্রাণী একত্র হয়ে বিশাল প্রবাল প্রাচীর গঠিত হয়েছে যা পৃথিবীর সবচাইতে বিচিত্র বাস্তুতন্ত্রের একটি এবং অস্ট্রেলিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম

১০ব্লু মাউন্টেন 

সিডনি থেকে ব্লু মাউন্টেন এর দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার, সিডনির অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই ব্লু মাউন্টেন , ৯৬ কিলোমিটার  লম্বা আর প্রায় ১১,৪০০  স্কয়ার কিলোমিটার জায়গা জুড়ে অবস্থিতি , এটি  ২০০০ সালে ইউনেস্কো  দ্বারা  ঘোষিত অস্ট্রেলিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম সেখানে রয়েছে বিরল জাতের উঁচু উঁচু গাছ, কাটুমবা জলপ্রপাত, সবুজে ঘেরা বিশাল নীলাভ পাহাড়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলরব এখানে নানান জাতের গাছ  রয়েছে  ইউক্যালিপটাস গাছ,  ব্লু গাম গাছ,  অ্যাস    ফার্ন গাছ এইসব গাছ থেকে অনেক উপকার পাওয়া যায়, যেমন- ইউক্যালিপটাস  দিয়ে তেল তৈরি হয়, পাতা হারবাল চায়ে ব্যবহার হয় আর এই গাছের ফুল থেকে মধু হয় তবে তার গন্ধটা খুবই তীব্র এছাড়া ব্লু মাউনটেনের জঙ্গলের  এই অ্যাস গাছ থেকে খুব সহজেই বুশ ফায়ারের সম্ভাবনা থাকে রোদবৃষ্টি, ঝড়, বরফের দাপট আর প্রতিকূল আবহাওয়ায় ব্লু মাউনটেন পাহাড়ের কিছুটা অংশ এমনভাবে রূপান্তরিত হয়েছে, দেখলে মনে হবে যেন তিনজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে স্থানীয় লোকেদের দেওয়া নামে এরা Three Sisters বলে  বিখ্যাত  এই  দর্শনীয় স্থানটি  পর্যটকদের কাছে  বিশেষভাবে আকর্ষণীয়
নিউক্যাসেল 
নিউক্যাসেল শহরটা ঘুরে দেখার মত, কারন এই শহর কয়লাখনি,বীচ,আঙ্গুরের ক্ষেত আর ওয়াইনের জন্য বিখ্যাত, এখানে  হোয়াইট আর  রেড  দুরকমের ওয়াইনই তৈরি হয় নিউক্যাসেল এর বীচে এলে বড় বড় জাহাজ দেখা যায়, কারণ ১৭৯৭ সালে এখানে কয়লাখনি আবিষ্কার হওয়ার পরথেকেই নিউক্যাসেল থেকে কয়লা ভর্তি জাহাজ চলাচল শুরু হয় আর নিউক্যাসেল এখন পৃথিবীর বৃহত্তম কয়লা রপ্তানির বন্দর নিউক্যাসেলে  রয়েছে , বিশাল জায়গা নিয়ে আঙ্গুরের ক্ষেত তার সঙ্গে  নানারকম ওয়াইন  বিক্রির দোকান পর্যটকরা এলে তাঁদের বিনামূল্যে ওয়াইন   চেখে দেখতে দেওয়া হয়  অনেক বিদেশী পর্যটক প্রতি বছর   নিউক্যাসেলে  বেড়াতে  আসে এইসব সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য

No comments

Powered by Blogger.